কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক

 

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক,
                                 কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক


কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । তাই আমাদের পরকালের কথা চিন্তা করে পরকালের জন্য সামানা গুছিয়ে রাখতে হবে ।যেহেতু আমাদেরকে মরতেই হবে একদিন না একদিন , তাই মৃত্যুর পরবর্তী জীবন যাতে সুখে শান্তিতে কাটে সেজন্য এবং কবরের আজাব যেন মাফ হয়ে যায়। আমরা যেন কবরের আজাব থেকে রেহাই পেতে পারি , সেজন্য আখিরাতের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই বেশ কিছু সহিহ আমলই পারে আমাদের কবরের আজাব কে কমিয়ে দিতে । সেই সম্পর্কে আজকে অলোচনা করব এই অনুচ্ছেদে । 

 

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা  মীন আজাবিল কবর ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিন নার  “ অর্থ : হে আল্লাহ আমাকে কবরের আজাব ও জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন ।  দোয়াটি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পাঠ করুন , যদি কেউ খাস দিলে নেক মনে এই দোয়া পাঠ করে তাহলে আল্লাহ সুবহানুতাআলা তার কবরের আজাব মাফ করে দিবেন । 

 

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে এই সূরা মূলক পাঠ করবে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি প্রদান করবেন — ( নাসাই )

আরো একটি হাদিসে উল্লেখ আছে ( তিরমিজি ) শরীফের হাদিস যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সূরা মূলক পাঠ করা ছাড়া ঘুমাইতে যাইতেন না  ।

সহিহ নূরানী কোরআন শরীফ থেকে বর্ণিত নবী করিম সাঃ বলেছেন আমি এটা ভালবাসি যে আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে যেন সূরা মূলক মুখস্ত থাকে ।


কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক
                                 


কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়

হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কবরের পাশ দিয়ে যাইতেন তখন কান্নায় তার দাঁড়ি ও বুক ভেসে যেত এবং লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করত আপনি জান্নাত ও  জাহান্নামের কথা শুনেও , জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা শোনার পরেও আপনি হয়তো এত কান্নাকাটি করেন না অথচ আপনি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর কান্নাকাটি করেন এটার কারণ কি । তখন তিনি বলেন আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুনেছি যে , কবর হলো আখিরাতের প্রথম স্তর তাই এখানে যে ব্যক্তি নিস্তার পেয়ে যাবে , সে সমস্ত পথে নিস্তার পেয়ে যাবে । কিন্তু এখান থেকে যে মুক্তি পাইলো না সে বাকি পথও মুক্তি পাবে না এবং তার জন্য হাশর নাসর ও অত্যন্ত ভয়ানক হবে । 

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত যে , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোরআন শরীফের ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটা সূরা আছে । যে সূরাটির তার তিলাওয়াতকারীদের জন্য , কবরের ভিতর ক্ষমা করে না দেওয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতে থাকবে । সেই সূরাটি হলো সূরা মূলক   ( আবু দাউদ ১৪০২ ) 


  • কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া আরবি  কী ? 

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক


আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিন আজাবিল ক্ববরি  “ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই 


  • কোন সূরা পড়লে কবরের আযাব মাফ হয়  জানেন কী ? 

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত যে , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোরআন শরীফের ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটা সূরা আছে । যে সূরাটির তার তিলাওয়াতকারীদের জন্য , কবরের ভিতর ক্ষমা করে না দেওয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতে থাকবে । সেই সূরাটি হলো সূরা মূলক   ( আবু দাউদ ১৪০২ ) 


জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া

আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন  যে , কবরস্থ ব্যক্তির কাছে পায়ের দিক দিয়ে ফেরেশতারা যখন শাস্তির জন্য আসতে চাইবে তখন তার দুইটা পা বলবে আমার দিক থেকে আসার কোন রাস্তা নাই । কারন সে সুরা মুলক পড়ত । তখন  সিনা এবং পেটের দিক থেকে আসতে চাইবে ফেরেশতারা তখন পেট এবং সিনা বলবে আমার মধ্যে সুরা মুলক ভরা সুতরাং এদিক থেকেও আসার কোন উপায় নেই । অতপর ফেরেশতারা  মাথার দিক থেকে আসার জন্য চেষ্টা করবে তখন সেখানেও  একই কথা বলা হবে । আসলে যে ব্যক্তি রাত্রে বেলায় সূরা মূল পাঠ করে সে অধিক এবং উৎকৃষ্ট আমল করে থাকলো নাচাই নাচাই নাচাই  ( নাশাই ) 


মা বাবার কবরের আজাব মাফের দোয়া

একটা হাদিসের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আসলে মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু ট্রেনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না । এক সদগায়ে জারিয়া জ্ঞান এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ আসলে অনেক উপকৃত হয় এবং তিন হচ্ছে নেক সন্তান । ( মুসলিম হাদিস : ৪৩১০ ) 

আসলে  নেক সন্তান হল এমন সন্তান যে তার বাবা-মা মারা গেলে বাবা-মার মৃত্যুর পরে সব সময় দোয়া ও আমল করে । 

আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত মৃত মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। আর এর জন্য আমাদের বলতে হবে রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেন তারা যেমন তারা আমাকে শৈশব করে লালন পালন করেছেন                                     ( সূরা বনী ইসরাইল : ২৪ ) 

 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার জনৈক একজন সাহাবীর জানাজার নামাজ  আদায় করতে গিয়ে কেবলামুখী হয়ে সবাইকে বলেন  যে , আপনারা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব হতে মুক্তির জন্য দোয়া করুন এবং তিনি উচ্চারণ করেন  “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিন আজাবিল ক্ববরি  “ অনুবাদ হে খোদা আমি আপনার নিকট  কবরের আজাব থেকে মাপ চাই”  । 


  • ভয়ঙ্কর কবরের আজাব  কী ? 

কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক


বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে যে , একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও যাওয়ার পথে তার সঙ্গীদের দুটি কবর দেখালেন এবং বললেন এই দুটি কবরে আজাব হচ্ছে । এই আজাবের কারণ খুবই সাধারণ । একজন পেশাব করার পরে পবিত্র থাকত না এবং অপরজন শুধু কুটনামি করে বেড়াতো অর্থাৎ চুগলখুরি করে বেড়াতো । এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুরের ডাল ভেঙে দুই টুকরা করে কবর দুটির উপর পুতে দিলেন ।


কবরের আজাব বাংলা

কবরে থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিনই সকালবেল দুইবার জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হবে । এরপর যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে তখন তাদের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।  অন্য আয়াতে এসেছে  “ অচিরেই আমি ( আল্লাহ ) তাদের দুইবার আজাব দেব তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হবে ভয়াবহ আজাদের দিকে  “  ( সুরা তাওবা :আয়াত ১০১ ) 

কবরের আজাবের সময় লোহার হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হবে এবং তার শব্দের এত চিৎকার হবে যে চিৎকারের শব্দ মানব এবং দানব ছাড়া আশেপাশের সবকিছুই শুনতে পাবে ( বুখারী হাদিস : ১৩৩৮ ) 

 

কবরের মধ্যে যে তিনটি আযাব হবে ---  তার মধ্যে ১. কবরের মধ্যে তার এক পাশের শরীরের হাড় অন্যপাশের শরীরের হাড়ের সাথে মিশে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে । ২.  আল্লাহু সুবাহানাল্লাহ দিন রাতের সব সময় কবরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রাখবেন । ৩. আল্লাহ আযাবের ফেরেস্তা নিযুক্ত রাখবেন এবং তার হাতে লোহার মুগুর থাকবে এবং সেটা দিয়ে মারবে আর বলবে দুনিয়াতে কেন নামাজ পড়ো নাই তাহার ফল ভোগ করো । 


শেষ ব্যাখা 

  আশা করি কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া ও সুরা মুলক বিষয়ে জানতে পেরেছেন । বেনামাজির নয়টি আজাব হবে তার মধ্যে মৃত্যুর সময় তিনটি আজাব কবরের মধ্যে তিনটি আযাব এবং হাশরের মাঠে তিনটি আযাব । মৃত্যুর সময় তিনটি আজাব এক অত্যন্ত দুর্দশা গ্রস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে দুই ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে ও তিন মৃত্যুর সময় তার অনেক পিপাসা পাবে ।

আরো জানুন 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url